বাবাকে তাবলিগ জামাতে পাঠিয়ে অপহরণের নাটক দুই মেয়ের

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৮ জুন ২০২৫, ২৩:৫১

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ফাঁসাতে আব্দুল মন্নান চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে ৪০ দিনের তাবলিগ জামাতে পাঠিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন তার দুই মেয়ে।
এদিকে প্রতিপক্ষের ১০ জনের বিরুদ্ধে চুনারুঘাট থানায় মামলার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আব্দুল মন্নানকে জীবিত উদ্ধারের দাবি জানিয়েছিলেন তার মেয়ে শাহিনা আক্তার।
এ ঘটনার ১৪ দিন পর চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলমের তদন্তে বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুক্রবার (২৭ জুন) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাহ উপজেলার রাজাপুর গ্রামের একটি মসজিদ থেকে আব্দুল মন্নানকে উদ্ধার করে অপহরণ নাটকের রহস্য উদঘাটন করেন তিনি।
পুলিশ ও মামলা সূত্র জানা যায়, ১৩ জুন রাতে প্রতিপক্ষের লোকজন মন্নান চৌধুরীকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় বলে তার সন্তানরা অভিযোগ করের। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন-এমন অভিযোগ এনে ১০ জনকে আসামি করে চুনারুঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে শাহিনা আক্তার। ২৪ জুন চুনারুঘাট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন শাহিনা। এতে তিনি প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে তার বাবাকে অপহরণের অভিযোগ এনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জীবিত উদ্ধারের দাবি জানান।
এদিকে, থানায় মামলার পর মূল রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নামে চুনারুঘাট থানা পুলিশ। ওসি নুর আলমের নেতেৃত্বে তৎপর হয়ে উঠেন পুলিশ সদস্যরা। শুরুতেই অপহরণের বিষয়টি সন্দেহজনক হলে আব্দুল মন্নানকে উদ্ধারে কাজ করে পুলিশ। একপর্যায়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মৃদুল কুমার ভৌমিকসহ একদল পুলিশ অনুসন্ধানে মাঠে নামেন।
পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিখোঁজ মন্নান চৌধুরী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাহ উপজেলার রাজাপুর গ্রামে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। শুক্রবার বিকালে থানার এসআই মৃদুল কুমার ভৌমিকসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফতুল্লাহ থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে থানা নিয়ে আসে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল মন্নান চৌধুরী জানান, ৪০ দিনের জন্য রাজাপুর গ্রামের মাস্টারবাড়ি জামে মসজিদে তাবলিগ জামাতে অংশ নিতে গত ১৩ জুন থেকে আত্মগোপনে ছিলেন। কেউ তাকে অপহরণ করেনি।
অপর একটি সূত্র জানায়, জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আব্দুল মন্নান চৌধুরীসহ তার পরিবারের বিরোধ রয়েছে। তাদের ফাঁসাতে ও হয়রানি করতে অপহরণের নাটক সাজিয়ে থানায় মামলা করেন তার দুই সন্তান। তবে পুলিশ মূল রহস্য উদঘাটন করায় এলাকায় শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
সচেতন মহলের দাবি, এ ধরনের সাজানো নাটক আইনের অপব্যবহার এবং ভিকটিমদের প্রতি চরম অবিচার। প্রশাসন যথাসময়ে সত্য ঘটনা উদঘাটন করায় মামলার আসামিদের পরিবারে ফিরেছে স্বস্তি।