আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যকরী সদস্য ছিলেন আব্দুল লতিফ। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দলের প্রতিটি মিছিল-মিটিংয়ে সরব উপস্থিতি ছিল তার। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্বাচনী প্রচারণায় সামনের সারিতে ছিলেন তিনি। এই ব্যক্তিই বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের চলমান আন্দোলনে সামনের সারিতে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এই আব্দুল লতিফ। এই সংগঠনে পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছেন। তাদের অনেকে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। তারাও এখন বোল পালটে ইশরাককে মেয়র হিসেবে চেয়ে আন্দোলনে মিছিলে স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডিএসসিসির বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে আব্দুল লতিফের মুখোশ বদল হয়েছে। এখন ইশরাকের আন্দোলনে অংশ নিয়ে তার সব অপকর্ম ঢাকতে চাইছেন। বিএনপির নেতারাই তাকে এ সুযোগ করে দিচ্ছেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া সংগঠন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ওই নির্বাচনে শেখ তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তখন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লোকজন জাল ভোট দিয়েছেন এবং কারচুপি করেছেন বলে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ইশরাক হোসেন।
এর মধ্যে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট তথা সরকার পতনের পর গোপনে দেশ ছাড়েন শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে চলতি বছরের ২৭ মার্চ ইশরাক হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে রায় দেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। ২৭ এপ্রিল ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এখনো ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো হয়নি।
এর প্রতিবাদে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করছেন ডিএসসিসির কর্মচারীরা। আজ শনিবারও (২৪ মে) নগর ভবনে তালা লাগিয়েছেন তারা। ফলে সেবা নিতে গিয়ে ফিরে গেছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
ডিএসসিসির একাধিক কর্মচারী জানান, ইশরাকের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে নগর ভবনে তালা ঝুলিয়েছেন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যকরী সদস্য ও ডিএসসিসির স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ। তার কার্যকলাপে মনে হচ্ছে তিনিই এখন বিএনপির বড় নেতা। তার চাপে করপোরেশনের বিএনপিপন্থি অন্য কর্মচারীরা নাজেহাল হওয়ার দশা। অথচ শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্বাচনে ভোট কারচুপিতে জড়িত ছিলেন আব্দুল লতিফ। তার সঙ্গে স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সালাউদ্দিন ও শাহ আলম জড়িত ছিলেন। পরে তারা তাপসের কাছ থেকে বহু সুযোগসুবিধা নিয়েছেন। এখন বিএনপির আন্দোলনে অংশ নিয়ে ইশরাককে বিতর্কিত করছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ইশরাকের সমর্থকরা। ওই আন্দোলনে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন আব্দুল লতিফ। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আমি ডিএসসিসির স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আজকের এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করলাম। আমাদের একটাই দাবি জনতার মেয়র ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ পড়াতে হবে।’
শনিবারও (২৪ মে) নগর ভবনে তালা দিয়ে ইশরাকের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছেন আব্দুল লতিফ। পরে বিকেলে মুঠোফোনে আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা কর্মচারীরা সুবিধা বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার। তাপসের আমলে আমাকেসহ এক হাজারের বেশি স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। আমরা অনেক দেনদরবার করছি। এখন ইশরাক সাহেব মেয়রের শপথ নিলে আমাদের দেখবেন বলে আশা করি। তাই তার পক্ষে আন্দোলন করছি।’
আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে বিএনপির ইশরাককে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে আব্দুল লতিফ বলেন, ‘করপোরেশনে যখন যে মেয়র আসে তার হয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। আমি আওয়ামী লীগের কমিটিতে নামেমাত্র ছিলাম।’
ইশরাকের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকাবাসী সংগঠনের সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান। তিনি এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি আসলে সবাইকে চিনি না। সময় করে খোঁজ নেবো কে কার পক্ষের লোক। এখন আমাদের লক্ষ্য আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলা। তাপসের সঙ্গে কেউ থেকে থাকলে তার দায়দায়িত্ব আমরা নিতে পারবো না।’