সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৯ মে ২০২৫, ১১:৩৬


সাধারণ গ্রাহকদের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনা সহজ করা হচ্ছে। আগের মতো শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) দিয়েই সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ দেওয়া হতে পারে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) দেখানোর যে বাধ্যবাধকতা, তা উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র কেনায় পিএসআর দেখানোর বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হতে পারে কিংবা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় এই ঘোষণা দিতে পারেন। ফলে আগের মতো শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদ জমা দিয়েই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন আগ্রহী গ্রাহকেরা।
বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে আগের বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সীমিত ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা। নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকের করযোগ্য আয় না থাকা সত্ত্বেও শুধু সঞ্চয়পত্র কেনার কারণে প্রতিবছর রিটার্ন জমা দিতে হয়। দেশে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ নয় বলে টিআইএনধারীদের অনেকে রিটার্ন জমা দেন না।
বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। এগুলো হলো: পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র; তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র। তবে পরিবার সঞ্চয়পত্রের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। শুধু নারীরা এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
এদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রায় এক বছর ধরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। উল্টো সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিট বা প্রকৃত ঋণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট সাড়ে ৮৩ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বিক্রি হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার।
এই বিক্রির বিপরীতে প্রথম সাত মাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা।
ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকারের নিট ঋণ ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণাত্মক ছিল। অর্থাৎ সরকার যেখানে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করার কথা, উল্টো মানুষ সঞ্চয়পত্র বেশি ভেঙে ফেলার কারণে সুদাসল বাবদ সরকারের ব্যয় বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় দেড় বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয়প্রবণতা কমেছে। উল্টো অনেকে বাড়তি খরচ সামাল দিতে সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলছেন।
সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ করে। অভ্যন্তরীণ ঋণের একটি অংশ সংগ্রহ করা হয় ব্যাংক খাত থেকে। আরেকটি বড় উৎস সঞ্চয়পত্র। তবে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কম ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ ঋণাত্মক থাকলেও অর্থবছর শেষে এই খাত থেকে সরকারের ঋণ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকবে। কারণ, গত জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফার হার বাড়িয়েছে সরকার। মুনাফা বৃদ্ধির পর সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কিছুটা বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
এনবিআর সূত্র বলছে, সঞ্চয়পত্র কিনতে সাধারণ মানুষকে যাতে বাড়তি ঝামেলায় পড়তে না হয়, সে জন্য রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। কারণ, দেশে নিম্ন মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিধবা নারীসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। তাঁদের অনেকের করযোগ্য আয় নেই। তারপরও শুধু এনবিআরের শর্তের কারণে প্রতিবছর তাঁদের রিটার্ন জমার ঝক্কি পোহাতে হয়।
এ বিষয়ে এনবিআরের আয়কর বিভাগের সাবেক সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, যদি সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হয়, তবে সেটি হবে এনবিআরের একটি ভালো সিদ্ধান্ত। এতে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে। এ দেশে অনেক বিধবা নারী আছেন, যাঁরা সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভরশীল। তাঁদের করযোগ্য আয় না থাকার পরও রিটার্ন জমা দিতে হয়। আবার অনেক অবসরভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী শেষ বয়সের সম্বল হিসেবে সঞ্চয়পত্রের ওপর ভরসা করেন। তাঁদেরও প্রতিবছর শূন্য রিটার্ন দিতে হয়। রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে তাঁদের নানা হয়রানির মুখেও পড়তে হয়।
বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। এগুলো হলো: পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র; তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র। তবে পরিবার সঞ্চয়পত্রের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। শুধু নারীরা এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
সঞ্চয়পত্র ছাড়াও বর্তমানে ৪৫টি সরকারি-বেসরকারি সেবা গ্রহণে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বা পিএসআর দাখিল বাধ্যতামূলক। রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা বাড়াতে এই উদ্যোগ নেয় এনবিআর।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত করবর্ষে ১৬ লাখ করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দেন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ শূন্য রিটার্ন দিয়েছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা দেওয়া হবে। এবার জাতীয় সংসদ না থাকায় জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন বক্তৃতার মাধ্যমে বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।