আগামী ২৯ এপ্রিল উদ্বোধন হচ্ছে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫’। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের প্রথম এই পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হবে তিন দিনব্যাপী। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের দিন তার হাত থেকে বীরত্বপূর্ণ ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্যরা পুলিশ পদক গ্রহণ করবেন। এ বছর ৬২ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে পুলিশ পদক দেওয়ার জন্য মনোনীত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এখন চূড়ান্ত অনুমোদন করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পুলিশ সূত্র বলছে, বিগত বছরগুলোয় ঢালাও পুলিশ পদক দেওয়া হতো। সর্বশেষ গত বছর ৪০০ পুলিশ কর্মকর্তা এবং সদস্যকে পুলিশ পদক দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর এবার পুলিশ পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আগের মতো আর ঢালাও পুলিশ পদক দেওয়া হবে না। এ ছাড়া যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে, তাদের পদক দেওয়া হবে না। সে অনুযায়ী এবার পুলিশ পদকের প্রস্তাব দফায় দফায় যাচাই-বাছাই করা হয়। অন্যদিকে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য ফ্যাসিবাদবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, পদকের জন্য মনোনীত করার ক্ষেত্রে এটাও বিবেচনায় নেওয়া হয়। পাশাপাশি ভালো কাজের বিষয়টি মাথায় রাখে পুলিশ সদর দপ্তর।
এবার পদকের তালিকায় ৬২ জনের মধ্যে ২১ জনই পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা। রয়েছেন পুলিশের সাবেক আইজি। রয়েছেন কয়েকজন অতিরিক্ত আইজিপি। আবার ভালো কাজ এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকা নিয়েও কেউ কেউ পুলিশ পদকের জন্য মনোনীত হননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বুদ্ধিদীপ্ত পুলিশিং কৌশল প্রয়োগ করা ছাড়াও সাহসিকতার সঙ্গে অপরাধ দমনের জন্য এবার ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ যেমন পদক দেওয়া হচ্ছে, পক্ষান্তরে বিতর্কিতরাও এবার স্থান করে নিয়েছেন এ তালিকায়। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণকারী এবং সাংবাদিক নির্যাতনে অভিযুক্ত ঢাকার আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ডাবলুর নামও রয়েছে। যদিও ওসি মোহাম্মদ মনিরুল বিষয়টিকে পরিকল্পিত গুজব বলে দাবি করেছেন।
জানা গেছে, এ বছরের পুলিশ সপ্তাহের জন্য ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা চূড়ান্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই বিষয়টি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। পুরস্কারের তালিকায় থাকা ৬২ কর্মকর্তা ও সদস্যকে আজ রবিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স প্যারেড গ্রাউন্ডে হাজির হতে বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) মো. কামরুল আহসান এক চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবগত করেন।
জানা গেছে, এবার চার ক্যাটাগরিতে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন প্রাক্তন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক একে এম শহিদুর রহমান, অ্যাডিশনাল আইজিপি আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ, অতিরিক্ত আইজিপি মো. আকরাম হোসেন, অ্যাডিশনাল আইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল আইজিপি মোসলেহ্ উদ্দিন আহমদ, অ্যাডিশনাল আইজি মো. ছিবগাত উল্লাহ, অ্যাডিশনাল আইজিপি মো. মাইনুল হাসান, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল পরিচালক (ডিআইজি) সরদার নুরুল আমিন, ডিআইজি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কাজী মো. ফজলুল করিম, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, সিএমপি পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, জিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান, ডিএমপি যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম, সিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসফিকুজ্জামান আকতার, ডিএমপি যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া, অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট) আহম্মদ মুঈদ, পিবিআই পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল, ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান, মাগুরা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা, চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু, পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা, উত্তরা ৮ এপিবিএন সহ-অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) খন্দকার ফজলে রাখি, ডিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার (ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স) রওনক আলম, ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম. এম. মোহাইমেনুর রশিদ, গাজীপুর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল, নীলফামারী সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ, ডিএমপি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জুয়েল রানা, ডিএমপি ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স ডিভিশন সহকারী পুলিশ কমিশনার এম. জে. সোহেল, সহকারী পুলিশ সুপার দোহার সার্কেল মো. আশরাফুল আলম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-০১ সহকারী পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম বিশ্বাস, এপিবিএন, উত্তরা পুলিশ পরিদর্শক গাজী গোলাম কিবরিয়া, পুলিশ পরিদর্শক (পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স আরআই) আবদুর রাজ্জাক আকন্দ, সিএমপি পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরী, কেএমপি সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম, ঢাকা আশুলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুল হক ডাবলু, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচাজ মো. মাসুদুর রহমান, রংপুর কাউনিয়া থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. একরামুল হোসাইন, পাবনা জেলা গোয়েন্দা শাখা এসআই শ্রী বেনু রায়, গাজীপুর জেলা পিবিআই এসআই মো. সুমন মিয়া, রাজশাহী গোদাগাড়ী মডেল থানার এসআই বরুন কুমার সরকার, কুমিল্লা জেলা পিবিআই এসআই ফিরোজ আহাম্মদ, হবিগঞ্জ জেলা এসআই মো. মাহমুদুল হাসান, পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জ থানা এসআই মো. এনামুল হক, সিএমপি ট্যাকটিক্যাল কমান্ডার, সোয়াট টিম কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ এসআই রাছিব খান, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এসআই মো. রকিবুল হাসান, ঢাকা জেলা পিবিআই এসআই মো. ইমরান আহমেদ, সিরাজগঞ্জ জেলা পিবিআইয়ের এসআই মো. আশিকুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা এসআই মো. ইয়াসিন, খাগড়াছড়ি থানা এসআই মো. আজিমুল হক, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ঢাকা এএসআই মো. কামরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল এএসআই মো. নাজমুল হুসাইন, ডিএমপি ভাটারা থানা এএসআই মো. মেসবাহ উদ্দিন, কক্সবাজার র?্যাব-১৫ হাবিলদার মো. সাইফুল ইসলাম, সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগ কনস্টেবল মো. রুহল আমিন ভূঞা, ঢাকা অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট কনস্টেবল মো. হাবিবুর রহমান, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কনস্টেবল মোহাম্মদ জোনাইদুল হক, ডিএমপি পরিবহন বিভাগ কনস্টেবল মো. মোবারক হোসেন ও পিওএম-পূর্ব বিভাগ ডেমরা আঞ্চলিক পুলিশ লাইনস কনস্টেবল মো. রিয়াদ হোসেন।
এদের মধ্যে লাঠিপেটা না করে বরং লাঠিপেটার অভিনয় করে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পিওএম-পূর্ব বিভাগ ডেমরা আঞ্চলিক পুলিশ লাইনস কনস্টেবল মো. রিয়াদ হোসেনকে পুলিশে ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক-পিপিএম’ পদে ভূষিত করা হচ্ছে।