বহুল আলোচিত হোম কেয়ার সার্ভিস নিয়ে আদালতে ৪ এপ্রিল দুই পক্ষের শুনানী হলেও চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সিডিপ্যাপ এজেন্সীগুলো আগামীতে এফআই হিসেবে কাজ করতে পারবে কিনা, নাকি পিপিএল একাই এফআই সিডিপ্যাপ হিসেবে কাজ করবে তা নিয়ে শুক্রবার আদালতে শুনানী হয়। শুনানীতে হোমকেয়ার এজেন্সীগুলো পিপিএল এর নিকট ষ্টেট হোমকেয়ার সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম স্থানান্তর আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব করে। তবে এরকম প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করে স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্ট আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রাখার পক্ষে মত দেয়। শুনানী শেষে নিউইয়র্ক স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্ট ও হোমকেয়ার এজেন্সী সংশ্লিস্ট দুই পক্ষকে নতুন করে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন বিচারক এবং এ মামলার রায়ের পরবর্তী তারিখ ১৪ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে নির্দেশনা যেটি দেয়া হোক ইতিমধ্যে পিপিএলে যারা ট্রান্সফার ও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন তারা ওই এজেন্সীর (পিপিএল) অধীনে হোমকেয়ার সিডিপ্যাপ সেবা গ্রহণ করবেন। আর যারা এখনো ট্রান্সফার ও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন কোনটাই করেননি তাদের সার্ভিস কোন এজেন্সীর অধীনে হবে সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে ১৪ এপ্রিল আদালতের সিদ্ধান্তের পর। এমনটি জানিয়েছেন হোমকেয়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ‘‘বেস্ট কেয়ার’’ হোমকেয়ার এজেন্সীর এডমিনিস্ট্রেটর সৈয়দ আল আমীন জানান, যে এজেন্সীরা তাদের কাছে থাকা সিডিপ্যাপ গ্রাহকদের ট্রান্সফার করেনি এমন প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে আদালতে পিটিশন দাখিল করে। অর্থ্যাৎ সিডিপ্যাপ সার্ভিসের সেবা গ্রহীতা যারা ট্রান্সফার হননি ও যারা ট্রান্সফার প্রসেসিং এ আছেন শুধু তাদের জন্য। শুক্রবার শুনানীতে বিচারক এ প্রস্তাবে রাজি হলেও নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ এ বিষয়ে দ্বিমত করেছে। হেলথ ডিপার্টমেন্ট আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেয়া সময় রাখতে চাচ্ছে। পরে বিচারক দুই পক্ষকে এ সময়সীমা নিয়ে আলাপ-পরামর্শ করার প্রস্তাব দেন এবং আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেন। এরপর আগামী ১৪ এপ্রিল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবে আদালত। এছাড়া যারা নির্দিষ্ট ৩১ মার্চের মধ্যে ট্রান্সফার হননি তাদের অথরাইজেশন অটোমেটিকেলী চলে গেছে ১ এপ্রিল থেকে। আর যারা ট্রান্সফার হয়েছেন পিপিএলে তাদের অথরাইজেশন ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকবে। আগের সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে প্রক্রিয়ায় সার্ভিস দেয়া হতো ঐ সিস্টেম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, যেভাবে সিডিপ্যাপ গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে যে আদালতের সিদ্ধান্তে আবার পিপিএল থেকে পুরোনো এজেন্সীর কাছে ফিরে আসা যাবে। আসলে এরকম কিছুনা। এরকম বিভ্রান্তিতে পড়ে অনেক সেবা গ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এছাড়া হেলথ ডিপার্টমেন্ট বিষয়টির ওপর নজরদারী রাখছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সিডিপ্যাপ সার্ভিস খুবই জনপ্রিয়। প্রায় ৫০ হাজার বয়স্ক বাংলাদেশী এ সেবা গ্রহণ করেন। তাদেরকে কেন্দ্র করেই কমিউনিটিতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ৫০টিরও অধিক হোম কেয়ার এজেন্সী গড়ে উঠেছে। রয়েছে ৫ শতাধিক এজেন্ট। সিডিপ্যাপ এককভাবে পিপিএল এর কাছে চলে যাওয়ায় অনেক এজেন্সীই পথে বসতে যাচ্ছে। বেকার হতে চলেছেন শত শত এজেন্ট। এতে পুরো কমিউনিটিতে হতাশা বিরাজ করছে।
নিউইয়র্ক স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্টের সিদ্ধান্ত অনুসারের সিডিপ্যাপ পরিচালনার দায়িত্ব পায় পিপিএল। ডিপার্টমেন্ট সকল সিডিপ্যাপ এজেন্সীর পারমিশন বাতিল করে। ৩১ মার্চের মধ্যে রোগীদের পিপিএল স্থানান্তরের শেষ তারিখ ছিল।স্টেট গর্ভনমেন্ট ও হেলথ ডিপার্টমেন্টের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হোম কেয়ার এজেন্সী মামলা দায়ের করে। ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের একটি ফেডারেল কোর্ট গত সোমবার ৩১ মার্চ পিপিএল এ নতুন করে রেজিস্ট্রেশন স্থগিত ঘোষণা করে। আজ শুক্রবার উভয় পক্ষের শুনানী শেষে আদালত রায় প্রদান করতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, পিপিএল’র কাছে স্থানান্তরের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। তা হতে পারে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এতে সিডিপ্যাপ এজেন্সীগুলোর সাথে এখনও যেসব রোগী রয়েছেন তাদের সেবা দিতে পারবেন। তবে ২ লাখ ৬০ হাজার রোগীর মধ্যে ২ লাখই ইতোমধ্যে পিপিএল এর সাথে রেজিস্ট্রিকৃত। তারা তাদের সেবা পিপিএল এর মাধ্যমেই পেতে থাকবেন। প্রায় ২০ হাজার আবেদন এখনও প্রক্রিয়াধীন আছে। পিপিএল জানিয়েছে, রেজিস্ট্রেশনে কিছু সময় লাগছে। এটা সম্পন্ন হলে ব্যাক পে সহ বকেয়া পেমেন্ট প্রদান করা হবে। এতে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। নিউইয়র্কের ৬৮০টি সিডিপ্যাপ এজেন্সী একক পিপিএল এর মাধ্যমে সিডিপ্যাপ সেবা পরিচালনার বিপক্ষে। তাদের দাবি ইকুয়াল জাস্টিসের মাধ্যমে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হোক। একক কোম্পানীকে এই ব্যবসার কর্তৃত্ব প্রদান করে গর্ভনর মনস্টারের ভুমিকায় অবতীর্ন হয়েছেন।
একাধিক প্রতিষ্ঠান এই মামলার বাদী হিসেবে রয়েছেন।তাদের মধ্যে রয়েছে গ্লাইডেডন এলএলসি, আমেরিকান হোম কেয়ার, ব্রুকলিন সেন্টার ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স অব দ্য ডিস্যাবেল্ড ও রিজিওনাল সেন্টার ফর ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিভিং, লিজা এঞ্জেসার, ম্যারিসল গেচিয়াস, গীতাঞ্জলি সিপারসড তার পরবর্তী বন্ধু, সাবিত্রী সিপারসড, এবং মারিয়া জেইম, তার নিজের পক্ষে এবং ওয়াই.পি.এস সহ অনেকে। জাজ ফ্রেডারিক ব্লক ৪ এপ্রিল পর্যন্ত পিপিএলে সিডিপ্যাপ রোগী রেেিজিস্ট্রশনের স্থগিত ঘোষণা করেন। আজ বাদী ও বিবাদী হেলথ ডিপার্টমেন্ট ও পিপিএল এর কাছে বক্তব্য শুনে আদালত রায় প্রদান করবেন।
মেডিকেউড প্রকল্পের অধীনে সিডিপ্যাপ পরিচালিত হয়। গত ১০ বছর ধরে পুরো স্টেটের ৬৮০টি এজেন্সী সিডিপ্যাপ (কনজুমার ডাইরেকটেড পারসোনাল এসিসট্যান্স প্রোগ্রাম) পরিচালনা করতো। তা পরিচালনার জন্য স্টেট গর্ভমেন্ট এককভাবে এখন পিপিএল ওপর হস্তান্তর করেছে। এতে ৬৮০টি এজেন্সী আজ ধ্বংসের মুখে।