দিনাজপুরের হিলি চেকপোস্ট দিয়ে কমেছে ভারত-বাংলাদেশের পাসপোর্ট যাত্রীর সংখ্যা। এতে করে একদিকে সরকারের রাজস্ব কমছে অন্যদিকে বেকার হয়ে পড়েছে সেখানকার শতাধিক শ্রমিক।
শত-শত পাসপোর্ট যাত্রীর পদচারণায় মুখরিত চিরচেনা হিলি চেকপোস্ট রোডটি খা খা করছে। প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ৮০-৯০ জন যাত্রী ভারতে যাচ্ছেন। একইভাবে ভারত থেকে ৮০-৯০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসছেন। হাতে গোনা কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকও যাতায়াত করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত সরকার সীমিত পরিসরে স্টুডেন্ট ও জরুরি মেডিকেল ভিসা চালু রেখেছে। এদের মধ্যে কিছু যাত্রী হিলি চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো অবধি বিজনেস, ট্যুরিস্টসহ অন্যান্য ভিসা প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। আর এ কারণে বিজনেস ভিসা না পেয়ে হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতে যেতে পারছেন না। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিসহ চরম বিপাকে পড়ছেন। অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা ট্যুরিস্ট ভিসা না পেয়ে ভারত ভ্রমণ, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে যেতে পারছেন না।
চেকপোস্টের শ্রমিক মমিন হোসেন বলেন, গত বছর এ সময়ে চেকপোস্ট দিয়ে দিনে উভয়দেশের ৬০০-৭০০ যাত্রী চলাচল করতো। এখন সে চিত্র আর নাই। চেকপোস্টে সুনসান নীরবতা। আগে এখানে কাজ করে যে আয় হতো এটা দিয়েই সংসার চলত কিন্তু এখন দিনে এক দুজন যাত্রী পারাপার হয় এতে করে যে আয় হয় এটা দিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি।
স্থানীয় কসমেটিকস ব্যবসায়ী শাকিল আহম্মেদ জানান, পাসপোর্ট ধারী যাত্রীর সংখ্যা কম হওয়ার কারণে আমাদের ব্যবসায়ীদের পথে বসা অবস্থা। আগে একজন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে গেলে তাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কয়েক জন সঙ্গে আসত। আমাদের ব্যবসা ভালো চলত। এখন যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ার কারণে ব্যবসায় নেই বললেই চলে।
গাইবান্ধা থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রী রফিকুল ইসলাম জানান, খুব কষ্ট করে ঢাকা থেকে মেডিকেল ভিসা পেয়েছি। একান্তই জরুরি হওয়ায় ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে। আগে থেকে সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে আসছিলাম। তাই আবার চেকআপের জন্য যেতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের ‘রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে’ অধ্যয়নরত বাংলাদেশি এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা ভারতে লেখাপড়া করি কিন্তু তেমন কোনো ছুটি পাই না। তাই আমাদের অভিভাবকরা আমাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতে যেতেন। কিন্তু এখন ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকায় তারা দেখা করতে বা যেতে পারছেন না।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের প্রায় ভারতে যেতে হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট পট-পরিবর্তনের পর আমাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। কয়েকবার আবেদন করেও ভিসা পাওয়া যায়নি। রপ্তানিকারকদের মোবাইলে ভিডিও বা ছবি দেখে পণ্যগুলো ভারত থেকে আমদানি করতে হচ্ছে।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম জানান, যাত্রী সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমেছে। পট পরিবর্তনের আগে চেকপোস্ট ব্যবহার করে শত শত যাত্রী দুই দেশে আসা-যাওয়া করতেন। ভারত ভিসা বন্ধ রাখায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে ইস্যু করা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভারতীয় ভিসা নিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীরা এ চেকপোস্ট দিয়ে চলাচল করেছেন। কিন্তু সেই সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কমে এসেছে। এখন ট্যুরিস্ট, বিজনেসসহ অন্যান্য ভিসা দেওয়া বন্ধ থাকায় শুধুমাত্র মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসায় যাত্রীরা যাচ্ছেন।