৭৫ বছরে আওয়ামী লীগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৩ জুন ২০২৪, ১১:৫৩

আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের পথপরিক্রমায় নেতৃত্বের মূল্যায়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নাম। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিবেচনায়, ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে এ দেশের সবচেয়ে সৎ, সাহসী ও দূরদর্শী নেতা শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বাংলাদেশ। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সেই দেশ পরিণত হয়েছে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে। অর্জন করেছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা।
দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সারা দেশ ঘুরে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করতে নিরলস পরিশ্রম করেন তিনি। নীতি ও আদর্শকে সমুন্নত রাখার এই যাত্রায় তিনি ১৯ বার আততায়ীর হামলার শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে সর্বশেষ ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। শুধু আওয়ামী লীগকেই নয়, বাংলাদেশকেও তিনি নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বাঙালি জাতির জীবনে দুটি সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন, তা হলো- বাঙালির স্বাধীনতা ও উন্নয়ন। এই দুটি অর্জনই এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে এসেছে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসেছে সর্বশ্রেষ্ঠ উন্নয়ন। এ দুটি অর্জন আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরে এসে একাকার হয়ে গেছে।’
তিনি বিশ্বশান্তি ও মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত
দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন শেখ হাসিনা। অশান্ত পাহাড়কে শান্ত করতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পদক্ষেপ নেন তিনি। যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যের দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তি হয়। এ ছাড়া মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে Mother of Humanity হিসেবে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
দিনবদলের সনদ রূপকল্প-২০২১
শেখ হাসিনার দিনবদলের যাত্রার শুরু ২০০৮ সালে। ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টির মধ্যে ২৬৪টি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট জয়ী হলে শুরু হয় রূপকল্প ২০২১-এর পথে শুভযাত্রা। তার নেতৃত্বে ২০১৮-১৯ সালে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৮.৫ শতাংশে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের উন্নয়ন কমিটি বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ভিশন ২০৪১ বা স্মার্ট বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ শুধু উন্নয়নশীল দেশের বৃত্তেই প্রবেশ করেনি, অর্থনৈতিক উন্নয়নে পৃথিবীতে রোল মডেল হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য চারটি ভিত্তি বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এগুলো হলোÑ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। ২১০০ সালের বদ্বীপ কেমন হবেÑ সেই পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ ডিজিটাল সুবিধাকে ব্যবহার করে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার এবং অন্যান্য ডিজিটাল সেবা রপ্তানি করছে। এ ছাড়াও প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বছরে ৫০০ মিলিয়নের বেশি ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করছে। এই খাত থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছেÑ ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়েছেন তিনি
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দিয়েছেন এক নতুন পরিচয়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার সাহসী পদক্ষেপে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে নিউক্লিয়ার ক্লাবের গর্বিত সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করে আরও একবার বাংলাদেশের সক্ষমতার জানান দিয়েছেন তিনি। ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (মেট্রোরেল), মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা রেল সেতু সংযোগ প্রকল্প ও দোহাজারী থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
সামাজিক সুরক্ষা, আশ্রয়ণ ও নারী উন্নয়ন
দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার অভিপ্রায়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জমিসহ ঘর বিতরণ করেছেন। আর্থিক ও সামাজিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটিয়ে চলেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। বিনামূল্যে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা এবং উপবৃত্তির মাধ্যমে নারীদের এগিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। শেখ হাসিনা নিজেও বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ১০০ নারীর একজন।
অর্থনীতির চাকা সচল রেখে করোনা প্রতিরোধ
করোনার করালগ্রাস, এরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বহুমুখী দুর্যোগে পতিত হয়েছে পৃথিবীর সমাজ-অর্থনীতি। যার নানা প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক ভূমিকা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে করোনার থাবায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার নির্দেশনায় গৃহীত পদক্ষেপের কারণে সুরক্ষা পেয়েছে এ দেশের জনগণ। লক ডাউনে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে ওষুধ, খাদ্য ও সুরক্ষাসামগ্রী। রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে সবার জন্য তিনি নিশ্চিত করেছেন ভ্যাকসিন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ শেষ করে রায় কার্যকর করার মধ্যদিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সেটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারকাজ করে জনতার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনার অর্জনসমূহ
১৯৯৮ : ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফোয়েট-বোইগনি শান্তি পুরস্কার, অল ইন্ডিয়া প্রেস কাউন্সিলের মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড, মহাত্মা এম.কে. গান্ধী ফাউন্ডেশনের এম. কে. গান্ধী অ্যাওয়ার্ড; ১৯৯৯ : জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) থেকে দ্য সেরেস মেডেল; ২০০০ : র‍্যানডলফ কলেজ থেকে দ্য পার্ল এস. বাক অ্যাওয়ার্ড; ২০০৬ : মাদার তেরেসা আজীবন সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড; ২০১০ : ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, শিশু মৃত্যুহার বিষয়ে এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ পুরস্কার; ২০১১ : নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড; ২০১২ : স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনিজেশন (জিএভিআই) অ্যালায়েন্স অ্যাওয়ার্ড; ২০১৩ : রোটারি শান্তি পুরস্কার, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণে ভূমিকার জন্য জাতিসংঘ পুরস্কার; ২০১৪ : শিক্ষায় আইসিটি উন্নয়নে এবং স্বাস্থ্য খাতে আইসিটির ভূমিকার জন্য সাউথ সাউথ ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড, জাতিসংঘ নারীবিষয়ক সংস্থার ট্রি অব পিস অ্যাওয়ার্ড; ২০১৫ : ইউএনইপির চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড; ২০১৬ : জাতিসংঘ নারীবিষয়ক সংস্থার প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন; ২০১৮ : রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্য ইন্টার প্রেস সার্ভিসের পক্ষ থেকে আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের স্পেশাল ডিস্টিংশন অ্যাওয়ার্ড, গ্লোবাল উইমেন সামিটে গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড; ২০১৯ : গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনিজেশনের (জিএভিআই) ‘ভ্যাকসিন হিরো’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন, ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেনের (আইএসএডব্লিউ) ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন’, ইউনিসেফের চ্যাম্পিয়ন অব ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট, কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির ঠাকুর শান্তি পুরস্কার, ড. কালাম মেমোরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড; এবং ২০২১ সালে অর্জন করেছেন জাতিসংঘ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের ‘এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’।