গত বছর ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ছেলেশিশুদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম ছিল মুহাম্মদ। আর মেয়েশিশুদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম ছিল অলিভিয়া। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের তালিকায় উঠে এসেছে এ তথ্য। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথমবারের মতো এই তালিকায় শীর্ষ এক শতে স্থান করে নিয়েছে এথেনা ও ইয়াহিয়া।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস প্রকাশিত ওই তালিকায় ছেলেদের জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় জনপ্রিয় নাম নোয়াহ ও অলিভার। ২০২৩ সালেও ছেলেদের নামের তালিকায় শীর্ষ তিনে ছিল যথাক্রমে মুহাম্মদ, নোয়াহ ও অলিভার। মেয়েদের নামের তালিকায় টানা তৃতীয় বছরের মতো প্রথম দুটি স্থান দখল করে আছে যথাক্রমে অলিভিয়া ও অ্যামেলিয়া। তবে মেয়েদের নামের মধ্যে লিলি তৃতীয় স্থানে উঠে আসায় ইসলা এক ধাপ পিছিয়েছে।
শীর্ষ ১০০-এর তালিকায় নতুন যুক্ত হওয়া মেয়েদের নামের মধ্যে রয়েছে ইলোইস, নোরা, মাইলা, রোজা, এথেনা, সারা ও জো। ছেলেদের নামের ক্ষেত্রে নতুন যুক্ত হয়েছে অস্টিন, নাথান, ভিনি ও ইয়াহিয়া।
মুহাম্মদ নামটি ছেলেদের মধ্যে দ্বিতীয় বছরের মতো জনপ্রিয়তার শীর্ষে। গত বছর মোট ৫ হাজার ৭২১ জন শিশুর নাম রাখা হয়েছে মুহাম্মদ। ইংল্যান্ডের নয়টি অঞ্চলের মধ্যে পাঁচটি অঞ্চলেই এটি ছিল সবচেয়ে পছন্দের নাম। ওয়েলসের তালিকায় এটি ৫৭তম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া একই নামের বিভিন্ন বানান, যেমন মোহাম্মেদ (Mohammed) ২১তম স্থানে (১ হাজার ৭৬০ জন) এবং মোহাম্মাদ (Mohammad) ৫৩তম স্থানে (৯৮৬ জন) রয়েছে।
মেয়েদের নামের ক্ষেত্রে অলিভিয়া নামটি ইংল্যান্ডের সাতটি অঞ্চল ও ওয়েলসে প্রথম স্থানে রয়েছে। মোট ২ হাজার ৭৬১ জন শিশুর নাম অলিভিয়া রাখা হয়েছে।
শিশুদের নামসম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ ও ‘বেবি নেম এনভি’ বইয়ের লেখক এসজে স্ট্রাম জানান, অলিভিয়া আবারও শীর্ষস্থান দখল করায় তিনি অবাক হননি, তবে কিছুটা হতাশ। তাঁর মতে, এটি এমন একটি নাম, যা সবাই ভালোবাসে। নব্বইয়ের দশকে যেমনটা ছিল লুইস বা আশির দশকে ছিল সারাহ। অলিভিয়া একটি কালজয়ী নাম হিসেবে দারুণ, কিন্তু এই নামে শিশুর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। মানুষ এখন আরও বেশি অনন্য (ইউনিক) নাম খুঁজছে।
তাঁর মতে, পপ কালচারও নামের ওপর প্রভাব ফেলছে। যেমন, হলিউড অভিনেত্রী মার্গট রবির নামে মার্গট এবং জনপ্রিয় নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘সেক্স এডুকেশন’-এর একটি চরিত্র থেকে ওটিস নামটি এসেছে। স্ট্রামের মতে, বাবা-মায়েরা এখন তাঁদের চারপাশের জগৎ থেকে এবং নিজেদের পছন্দের বিষয় থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন।
তবে ছেলেদের নামের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ বাবা-মায়েরা সাধারণত ‘ঐতিহ্যবাহী নাম’ পছন্দ করেন, কারণ, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে এটি তাঁদের সন্তানদের কর্মক্ষেত্রে সফল হতে সাহায্য করবে। স্ট্রাম আরও জানান, এক শতাব্দীরও বেশি আগে জনপ্রিয় ছিল এমন অনেক নাম আবারও ফিরে আসছে। যেমন, আর্থার এখন শীর্ষ ১০-এ উঠে এসেছে, যা ১৫ বছর আগে কল্পনাতীত ছিল।
বেবি-নেমিং ওয়েবসাইট ‘নেমবারি’-এর বিশেষজ্ঞ ক্লেয়ার গ্রিন জানান, পুরোনো নামের এই ফিরে আসা ‘১০০ বছরের নিয়ম’ নামে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত এমন নাম ব্যবহার করি, যা দাদা-দাদির সময়ের নয়, বরং তার আগের প্রজন্মের। এই নামগুলো জীবন্ত স্মৃতি থেকে অনেক দূরে থাকে এবং পুরোনো জিনিসের প্রতি ভালোবাসার অংশ হিসেবে ফিরে আসে।’ এই নিয়মের কারণেই আগামী দিনে সুসান বা রজারের মতো নামের পুনরুত্থান দেখা যেতে পারে।
প্রকৃতি-সম্পর্কিত নামগুলোও জনপ্রিয় নামের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। লিলি, পপি ও আইভি এখন শীর্ষ দশে রয়েছে। ক্লেয়ার গ্রিনের মতে, এই নামগুলো ‘চিরসবুজ’ এবং বছরের পর বছর ধরে শীর্ষ ১০০-এর তালিকায় নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে। তবে কিছু নাম তাঁকে অবাকও করেছে। যেমন, জেসিকা নামটি এখনো শীর্ষ ১০০-এর মধ্যে থাকাটা তাঁর কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে।
২০২৪ সালে পাঁচবারের কম রাখা হয়েছে—এমন কিছু বিরল ছেলেদের নামের মধ্যে রয়েছে অসাম, কাথবার্ট, ক্রিসপিন ও বেকহ্যাম। মেয়েদের বিরল নামের তালিকায় রয়েছে সিসিলি, এভারেস্ট, অরকিড ও পোয়েম।