কারুন ছিলেন নবি মুসার (আ.) সম্প্রদায়ের লোক। কিন্তু তিনি ফেরাউনের পক্ষাবলম্বনকারী ও তার সমর্থক ছিলেন। তিনি ফেরাউনের জন্য নিজের সম্প্রদায়ের উপর নজরদারিও করতেন। এ কারণে ফেরাউনের পক্ষ থেকে তিনি সম্মানিত হয়েছিলেন। কাজ-কর্মে স্বাধীনতা ও সম্পদ অর্জনের সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি বাহ্যিকভাবে মুসার (আ.) পক্ষে থাকার ভাণ করতেন, কিন্তু অন্তরে তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন। তিনি মনে-প্রাণে ফেরাউনের সঙ্গেই ছিলেন। তাই পবিত্র কোরআনে তার নাম ফেরাউন ও হামানের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।
কোরআনের দুটি সুরায় কারুনের নাম ফেরাউন ও হামানের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা গাফিরে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি মুসাকে আমার নিদর্শন ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ প্রেরণ করেছিলাম ফেরাউন, হামান ও কারুনের কাছে। কিন্তু তারা বললো, এ তো এক মিথ্যাবাদী জাদুকর। (সুরা গাফির: ২৩-২৪)
সুরা আনকাবুতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর কারুন, ফেরাউন ও হামান! মুসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা পৃথিবীতে অহংকার করেছিল এবং তারা আমার শাস্তি থেকে পালাতে পারেনি। (সুরা আনকাবুত: ৩৯)
আল্লাহ তাআলা কারুনকে বিপুল সম্পদ ও প্রাচুর্য দান করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার সম্পদের হক আদায় করতেন না। দান-সদকা করতেন না। ধন-সম্পদের ক্ষমতা ও গর্বে অন্যদের ওপর জুলুম করতেন। অন্যদের তুচ্ছজ্ঞান করতেন। মুসা (আ.) তাকে হেদায়াতের পথে আনার অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা তার সব সম্পদসহ তাকে ধ্বংস করে দেন।
সুরা কাসাসে কারুনের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, তার দম্ভ ও আল্লাহর শাস্তিতে ধ্বংস হওয়ার বিবরণ এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, কারুন ছিল মুসার সম্প্রদায়ভুক্ত। অতঃপর সে তাদের সাথে উদ্ধত আচরণ করতে আরম্ভ করল। আমি তাকে এত ধন-ভান্ডার দান করেছিলাম যার চাবি বহন করা কয়েকজন শক্তিশালী লোকের পক্ষে কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ কর, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলল, দম্ভ করো না, আল্লাহ দাম্ভিকদের ভালবাসেন না। আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখিরাতের নিবাস অনুসন্ধান কর। তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেমন অনুগ্রহ করেছেন তুমিও অনুগ্রহ কর। আর জমিনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না।
কারুন বললো, আমি এই সম্পদ আমার নিজস্ব জ্ঞান-গরিমায় অর্জন করেছি। সে কি জানতো না যে, আল্লাহ তার পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন, যারা শক্তিতে ছিল তার চেয়ে প্রবল এবং ধন-সম্পদে অধিক প্রাচুর্যশীল? পাপীদেরকে তাদের পাপকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না।
কারুন শান-শওকাতের সাথে তার সম্প্রদায়ের সামনে হাজির হল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করে তারা বলে উঠল, হায়! কারুনকে যা দেয়া হয়েছে আমাদের জন্যও যদি তা হত! সত্যই সে মহা ভাগ্যবান ব্যক্তি। আর যারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিল, তার বলল, ধিক তোমাদেরকে! আল্লাহর প্রতিদানই উত্তম যে ইমান আনে ও সৎকর্ম করে তার জন্য। আর তা শুধু সবরকারীরাই পেতে পারে।
তারপর আমি কারুনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিলাম। তখন তার জন্য এমন কোন দল ছিল না, যে আল্লাহর মোকাবিলায় তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে সক্ষম ছিল না।
আর গতকাল যারা তার মত হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছিল তারা বলতে লাগল, আশ্চর্য! দেখলে তো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রসারিত অথবা সংকুচিত করেন। যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করতেন তবে আমাদেরকেও তিনি জমিনে দাবিয়ে দিতেন। দেখলে তো, কাফেররা সফল হয় না।
সেই আখিরাতের নিবাস আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করেছি যারা পৃথিবীর বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম আল্লাহভীরুদের জন্য। (সুরা কাসাস: ৭৬-৮৩)