ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত দ্রুত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে। দুদেশের হামলা-পাল্টাহামলার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহায়তা চেয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এরপরই জানা গেল, মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিটজ মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা হয়েছে।
জাহাজের গতিপথ শনাক্তকারী ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকের তথ্য অনুযায়ী, আজ সোমবার সকালে মার্কিন এই রণতরি দক্ষিণ চীন সাগর ত্যাগ করে পশ্চিম দিকে যাত্রা করেছে।
সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করে, তাহলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ শক্তির মোকাবিলা করতে হবে।
যদিও কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করার একটি ইসরায়েলি পরিকল্পনা বন্ধ করেছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প এই যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার কথা বলছেন। তবে আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনে ইরানে হামলারও হুমকি দিয়ে রেখেছেন তিনি।
সোমবার (১৬ জুন) ভোরে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের ওপর আঘাত হানে। এতে তেলআবিবে মার্কিন দূতাবাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপরই ট্রাম্প নতুন করে ইরানকে হুমকি দেন।
এদিকে সৌদি আরব, পাকিস্তান, তুরস্কসহ মিত্রদের একটি ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ইরান। তারা বলছে, এই সেনাবাহিনী গঠন করা হলে তা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের (ইউএস প্যাসিফিক ফ্লিট) কমান্ডারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর নিয়মিত উপস্থিতির অংশ হিসেবে নিমিটজ ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ গত সপ্তাহে দক্ষিণ সাগরে সমুদ্র নিরাপত্তা অভিযান পরিচালনা করে।
চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই রণতরির ভিয়েতনামের ডানাং বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। সেই সফর বাতিল করা হয়েছে বলে একজন কূটনীতিকসহ দুটি সূত্র জানিয়েছে। তার একটি সূত্র বলেছে, হ্যানয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তাঁকে জানিয়েছে যে ‘উদ্ভূত সামরিক প্রয়োজনে’ ইউএসএস নিমিটজের ভিয়েতনামের বন্দর যাওয়া বাতিল করা হয়েছে।
মেরিন ট্রাফিকের তথ্যে দেখা গেছে, মার্কিন রণতরিটি আজ সকালে পশ্চিমে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের টানা হামলায় এখন পর্যন্ত ২২০ জনের বেশি ইরানি নিহত হয়েছে এবং অন্তত ১২০০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ইরান তাদের পাল্টা হামলা থেকে পিছু হটার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। বরং তারা বলেছে, মিত্রদের নিয়ে একটি ‘ইসলামি বাহিনী’ গঠন করে তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
আর ইরানের পাল্টা হামলায় সোমবার পর্যন্ত অন্তত ২৪ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে এবং আরও অনেক আহত হয়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে তেল আবিব ও হাইফা শহরে আঘাত হেনেছে। অনেক ঘরবাড়ি ও আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে।