পাকিস্তানের মাটিতে ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে দু’দিনও কাটেনি। বৃহস্পতিবার সেই অভিযানের দ্বিতীয় পর্বে টালমাটাল পাকিস্তান।
বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ভারত-পাক উত্তেজনা কমাতে অপসারিত হতে পারেন পাক সেনা প্রধান আসিফ মুনির। তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হতে পারে বলেও সূত্রের দাবি। তাঁর জায়গায় সেনাপ্রধান হিসেবে শামসাদ মির্জ়ার নাম শোনা যাচ্ছে। একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, রাওয়ালপিন্ডিতে সেনার প্রধান কার্যালয়ে হানা দিয়ে সেটি কার্যত ধ্বংস করে দিেয়ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানে এই পালাবদলের চর্চার মধ্যেই শোনা যাচ্ছে, শীঘ্রই জেল থেকে মুক্ত হতে পারেন, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ঠিক দু’বছর আগে, ২০২৩-এর ৯ মে, গ্রেফতার করা হয়েছিল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধানকে। ইমরান খান জেল থেরে বার হলে শরিফ-ভুট্টো সরকারের ভবিষ্যৎ কী, উঠছে সেই প্রশ্নও।
আজ রাতে পাকিস্তানকে সব দিক থেকে ঘিরে ধরে অভিযান চালায় ভারত। সকাল থেকেই ইসলামাবাদ-সহ নানা জায়গায় ঘন ঘন সাইরেনের শব্দের মধ্যেই পাক সেনার শীর্ষ কর্তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আলোচনায় বসেন। খবর আসে, পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সঙ্গে দেখা করতে ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে গিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা শাহবাজ়ের দাদা নওয়াজ় শরিফ। শাহবাজ় কোথায় গিয়েছেন, তা নিয়েও রাতে চর্চা শুরু হয়। ২৬ বছর আগে কার্গিলে সেনা পাঠিয়ে ভারতের হাতে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল পাকিস্তানকে। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে জল্পনা ছড়াচ্ছে, শেষ পর্যন্ত কি দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন শরিফেরা?
এর মধ্যেই জোর চর্চা, বালুচিস্তানের কোয়েটার দখল নিয়েছে বালোচ লিবারেশন আর্মি। গত কয়েক দিন ধরে বালুচিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে লাগাতার পাক সেনাবাহিনীর উপরে হামলা চালিয়েছে তারা। ক্ষেপণাস্ত্র মেরে উড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া গাড়ি। নিহত হন ১০ জন পাক সেনা।
‘অপারেশন সিঁদুর ২.০’-এর ধাক্কায় টালমাটাল পাকিস্তানের সরকার এবং সেনা দু’পক্ষই। বিপুল ধস নেমেছে পাকিস্তানের শেয়ার বাজারে। বাতিল করা হয়েছে বহু ট্রেন। বন্ধ একাধিক বিমানবন্দরও। ইসলামাবাদ-লাহোর-সহ একাধিক বড় শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভারতের একাধিক সেনা ছাউনিতে হামলা চালিয়ে শক্তি দেখাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে পাক সেনা। বরং ভারতীয় বাহিনীর আঘাতে লাহোরে পাক এয়ার ডিফেন্স রেডার সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সেখানকার সেনাশিবির অনেকটাই অরক্ষিত। পাক সেনার দাবি, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি, গুজরানওয়ালা, চাকওয়াল, অ্যাটক, বাহাওয়ালপুর, মিয়াওয়ালি, ছোর এবং করাচিতে ড্রোন এসে পড়েছে।
রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাংশ ড্রোনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে বৃহস্পতিবার রাতের পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ম্যাচটি বাতিল করা হয়েছে। ওই স্টেডিয়ামে এ দিন পেশোয়ার জ়ালমি ও করাচি কিংস-এর মধ্যে ম্যাচ হওয়ার কথা থাকলেও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ছবি ও ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, স্টেডিয়ামের একাংশ ভেঙে গিয়েছে। বাইরে ভিড় করা জনতা সেই ছবি মোবাইলে তুলতে ব্যস্ত। এর পরেই ম্যাচটি বাতিল করা হয়।
উদ্বিগ্ন আমেরিকা তাদের নাগরিকদের দ্রুত লাহোর ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে। আমেরিকার দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পাকিস্তানে এই মুহূর্তে আমেরিকার যে সব নাগরিক রয়েছেন, তাঁরা যেন দ্রুত লাহোর ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। যদি তা না-করা যায়, তবে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে তাঁদের। আধিকারিকদেরও লাহোর ছেড়ে নিরাপদ জায়গায়
সরে যেতে বলা হয়েছে ওয়াশিংটনের তরফে।