পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষের সম্মতি পেলে কানাডা থেকে আলাদা হতে আগামী বছর একটি গণভোটের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির তেলসমৃদ্ধ প্রদেশ আলবার্টার প্রধান ড্যানিয়েল স্মিথ। সোমবার (৫ মে) সরাসরি সম্প্রচারিত এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, প্রদেশটি কানাডা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাক, আমি ব্যক্তিগতভাবে তা চাচ্ছি না।
এ সময়ে ঐক্যবদ্ধ কানাডার মধ্যে একটি শক্তিশালী ও সার্বভৌম আলবার্টা নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। স্মিথ বলেন, গত এক দশকে আমাদের প্রদেশের ওপর অটোয়া যেভাবে চেপে বসেছে, তা চলতে থাকবে কি না; আলবার্টার জনগণ সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টি টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার এক সপ্তাহ পর ড্যানিয়েল স্মিথের এমন ঘোষণা এসেছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশের অর্থনীতির ওপর ক্রমাগত শুল্কারোপের হুমকি দিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কানাডাকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে একীভূত করতে চান।
মঙ্গলবার (৬ মে) হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে মার্ক কার্নির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
একটি প্রাদেশিক গণভোটের জন্য আবেদনকারীদের যেসব শর্ত পূরণ করতে হতো, সেই বাধা কমিয়ে আনতে একটি আইন প্রণয়ন করেছে আলবার্টার ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড কনজারভেটিভ। তবে আইনটি এখনো পার্লামেন্টে পাস হয়নি।
আইনটি পাস হয়ে গেলে নাগরিকদের নেওয়া উদ্যোগে গণভোটের নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি গণভোটের জন্য ১০ শতাংশ ভোটারের সই লাগবে, আগে যা ছিল ২০ শতাংশ।
এছাড়া আবেদনে ১ লাখ ৭৭ হাজার ভোটারের সইয়ের জন্য আগে যেখানে ৯০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, সেটি বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে।
আলবার্টার প্রধান বলেন, আমরা কোনো বিশেষ সুবিধা কিংবা সহায়তা চাচ্ছি না, বরং উন্নয়ন এগিয়ে নিতে আলাদা হতে চাচ্ছি, যাতে আমাদের বিপুল সম্পদ আমরা রপ্তানি করতে পারি।
‘জনগণকে কীভাবে আমরা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সামাজিক সুবিধা দেব, আমরা সেটি বেছে নেওয়ার জন্য স্বাধীনতা চাই; এমনকি তা যদি অটোয়ার পরিকল্পনার তুলনায় ভিন্নভাবেও করা হয়,’ বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় সরকারের যেসব নীতির কারণে আলবার্টার লোকজন ক্ষুব্ধ, সেগুলো অবসানে একটি আলোচক টিম গঠন করবেন বলেও জানিয়েছেন ড্যানিয়েল স্মিথ। আলবার্টাবাসীর কষ্ট ও আইডিয়ার কথা শুনতে ধারাবাহিকভাবে একটি প্যানেল আলোচনা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এডমন্টনের ম্যাকইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন সরোসকি বলেন, মানুষের মধ্যে ক্ষোভ থাকতে পারে। সেটি যে একেবারে বিচ্ছিন্নতার দিকে যাবে, তা আমি বলতে পারছি না। তাদের অভাব-অনুযোগ গুরুতর। কিন্তু বিচ্ছিন্নতার শঙ্কা একেবারে অসম্ভব।
এর আগে ১৯৮০ ও ১৯৯৫ সালে কানাডা থেকে আলাদা হয়ে যেতে গণভোটের আয়োজন করেছিল ফরাসিভাষী প্রদেশ কুইবেক। কিন্তু দুবারই তারা ব্যর্থ হয়।
জন সরোসকি বলেন, আমি মনে করি না, স্মিথ বিচ্ছিন্নতা চাচ্ছেন। যেহেতু আলবার্টার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ আছে, সেই ভাবনা থেকে কানাডার কাছ থেকে কিছু সুবিধা আদায় করতে চাচ্ছেন তারা।
সূত্র: ইউএনবি