পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ ছত্রাক নেটওয়ার্ক পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু এখন এটা মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাইকোরাইজাল ছত্রাকসমৃদ্ধ এলাকাগুলোর মাত্র ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বর্তমানে সুরক্ষিত এলাকার আওতায় রয়েছে।
ছত্রাক গবেষণা ও সংরক্ষণে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা Spun (Society for the Protection of Underground Networks) জানিয়েছে, এই নেটওয়ার্কগুলো উদ্ভিদের মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং পৃথিবীর জলবায়ু ও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। এরা উদ্ভিদকে পুষ্টি সরবরাহ করে, মাটি তৈরি করে এবং বছরে ১৩ বিলিয়ন টনের বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড মাটিতে আটকে রাখতে সাহায্য করে, যা বৈশ্বিক জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমনের প্রায় এক–তৃতীয়াংশ।
Spun ও তাদের সহযোগী সংস্থাগুলো ২০২১ সালে একটি বৈশ্বিক মানচিত্র তৈরির কাজ শুরু করে, যার মাধ্যমে তারা ১৩০টি দেশ থেকে সংগ্রহ করা ২৮০ কোটিরও বেশি ছত্রাক নমুনার ভিত্তিতে পুরো পৃথিবীজুড়ে ১ বর্গকিলোমিটার স্কেলে ছত্রাকের বৈচিত্র্য বিশ্লেষণ করে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, ছত্রাক সংরক্ষণের দিক থেকে এখনও বড় ধরনের শূন্যতা রয়েছে। যেমন, ঘানার উপকূলীয় অঞ্চলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছত্রাক জীববৈচিত্র্য হটস্পট হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে উপকূল ক্ষয়ে যাওয়ার হার বছরে ২ মিটার হওয়ায় জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
Spun-এর নির্বাহী পরিচালক ড. টবি কিয়ার্স বলেন, এই ছত্রাকগুলো পুষ্টি চক্রে ভূমিকা রাখে, কার্বন সঞ্চয় করে এবং উদ্ভিদের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যখন আমরা এই বাস্তুসংস্থান নষ্ট করি, তখন বন পুনর্জন্মে বিলম্ব হয়, ফসল উৎপাদনে সমস্যা দেখা দেয় এবং উপরিভাগের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গবেষণার প্রধান লেখক ড. মাইকেল ভ্যান নিউল্যান্ড জানান, এই মানচিত্রগুলো শুধু বৈজ্ঞানিক নয়, বরং ভবিষ্যতের সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, “এই ছত্রাক নেটওয়ার্কগুলোর গুরুত্ব অগ্রাহ্য করা হলে প্রাকৃতিক জলবায়ু সমাধানের অনেক সুযোগ হারিয়ে যেতে পারে।”
নাসা, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারসহ বিভিন্ন সংস্থা এই ছত্রাক সংরক্ষণে গুরুত্ব দিচ্ছে। আইন ও নীতিনির্ধারণেও এই তথ্য ব্যবহারে তাগিদ দিয়েছেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘মোর দ্যান হিউম্যান লাইফ’ প্রোগ্রামের পরিচালক সিজার রড্রিগেজ-গারাভিতো।
বর্তমানে বিশ্বের দূরবর্তী ও কম পরিচিত ভূগর্ভস্থ অঞ্চল যেমন মঙ্গোলিয়া, ভুটান, পাকিস্তান ও ইউক্রেনে ছত্রাক গবেষণার কাজ চালাচ্ছে। তারা এই গবেষণা সম্প্রসারণে নতুন সহযোগী ও অর্থায়নের খোঁজে রয়েছে, কারণ তাদের মানচিত্র এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মাত্র ০.০০১ শতাংশ অঞ্চলই কভার করেছে।
বিশ্ব প্রকৃতি সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী ড. রেবেকা শ অ বলেছেন, এই ছত্রাক নেটওয়ার্কের সংরক্ষণ সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং খাদ্য নিরাপত্তার মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে