আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলো বাংলাদেশি তরুণদের মহাকাশবাস প্রকল্প

প্রযুক্তি ডেস্ক
  ২৪ জুন ২০২৫, ২৩:৫৯

বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা প্রকল্প “আউটার স্পেস হ্যাবিটেশন (OSH)”। 
সম্পূর্ণরূপে শিক্ষার্থী-নির্ভর ও স্বাধীনভাবে পরিচালিত এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলগ্রহে সাধারণ মানুষ বসবাস করবে এমন চিন্তা নয়, বরং একটি গবেষণাযোগ্য, টেকসই ও সুরক্ষিত হ্যাবিট্যাট তৈরি করা। এবং যেখানে বিজ্ঞানীরা অবস্থান করে গবেষণার মাধ্যমে মঙ্গলের প্রকৃতি, শক্তি, রসায়ন ও বসবাসযোগ্যতার প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পেতে পারবেন। 
OSH একটি অনন্য বৈজ্ঞানিক ধারণা উপস্থাপন করেছে যেখানে বৈজ্ঞানিক চিন্তা, প্রযুক্তি, সৃজনশীলতা ও আত্মনির্ভরতা একত্রে গেঁথে উঠেছে ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হিসেবে।
প্রকল্পটিতে যুক্ত করা হয়েছে সায়ানোব্যাকটেরিয়া দিয়ে অক্সিজেন উৎপাদন, হাইড্রোপনিক কৃষি প্রযুক্তি, মঙ্গল-মাটির বিষাক্ততা বিশুদ্ধকরণ, পানি ও বর্জ্য পুনঃব্যবহার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত জীবন-সমর্থন ব্যবস্থা। একইসাথে, গবেষক দলের সদস্যরা ৩D ডিজাইন, ৩D ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং বাস্তব প্রয়োগের জন্য ৩D প্রিন্টেড মাস্ক ডিজাইন করেছেন, যা মঙ্গলের অ্যাসিডিক বাতাস ও নিম্নচাপের পরিবেশে গবেষকদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
এছাড়াও প্রকল্পে মঙ্গলের সম্ভাব্য সব প্রাকৃতিক ঝুঁকি—যেমন ভূমিকম্প, অ্যাস্ট্রাল রেইন, সৌরঝড়, উল্কাবৃষ্টি, এসিড রেইন ইত্যাদির পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং প্রতিটি ঝুঁকির জন্য পৃথক সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন ও প্রতিরোধমূলক প্রযুক্তি সমাধান সংযুক্ত করা হয়েছে। যেমন, ভূমিকম্পের জন্য শক-অ্যাবজার্বিং বেজ, সৌরঝড় প্রতিরোধে কৃত্রিম চৌম্বক শিল্ড, উল্কাবৃষ্টির জন্য হাই-ডেনসিটি সুরক্ষা দেয়াল, এবং অ্যাসিড রেইনের জন্য কেমিক্যাল রেজিস্ট্যান্ট আচ্ছাদন ব্যবহার করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের জন্য তথ্য ও গবেষণার উৎস ছিল NASA Open Research Papers, ESA Archives, Mars Society Journals, SpaceX Data Reports এবং ISS Experiment Data। পাশাপাশি OSH-এ যুক্ত করা হয়েছে আরও কিছু আধুনিক বৈশিষ্ট্য, যেমন: পোর্টেবল এনভায়রনমেন্টাল স্যুট, মোবাইল ফার্মিং ইউনিট, মাল্টিলেয়ার এনালাইটিক স্ক্যানার, ক্লাইমেট রেগুলেশন চিপ এবং রিসাইক্লিং পডস, যা মঙ্গলে গবেষণাকাজের গতি ও কার্যকারিতা বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে।
এই যুগান্তকারী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছেন আবির খান (মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ) এবং মোহাম্মদ আলী মিশাল (সরকারি বিজ্ঞান কলেজ)। তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নটর ডেম কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, এবং আইডিয়াল কলেজ-এর একদল উদ্যমী ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ গবেষক। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে OSH-এর পূর্ণাঙ্গ মডেল, যা একদিকে যেমন বৈজ্ঞানিক পরিশীলনের প্রতীক, তেমনি সমন্বিত নেতৃত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এখন পর্যন্ত OSH প্রকল্পটি অর্জন করেছে ৫০টিরও বেশি জাতীয় পুরস্কার এবং অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা সহ ৫ টিরও বেশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, এই অসাধারণ অর্জন শুধু দলটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গর্ব নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও আন্তর্জাতিক গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে—যদি তাদের সুযোগ ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়।
“আউটার স্পেস হ্যাবিটেশন” আজ কেবল একটি বৈজ্ঞানিক মডেল নয়—এটি এক দৃষ্টিভঙ্গি, সাহসিকতা এবং ভবিষ্যতের জাতি নির্মাণের প্রতীক। এটি প্রমাণ করে, তরুণ প্রজন্ম কেবল প্রশ্ন করে না, তারা উত্তর তৈরি করে—এবং সেই উত্তর একদিন মানবজাতির পরবর্তী গন্তব্য নির্ধারণে সহায়তা করবে।