
বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনির বক্তব্য দেওয়ার সময় তার দিকে তেড়ে যান শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও সংগঠনটির কয়েকজন নেতাকর্মী।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় প্রশাসনের আয়োজিত আলোচনা সভায় এই ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাকসু ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, যাদের ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ে আসার সংস্কৃতি আছে, তারা হট্টগোল করবেই। তবে আমরা সকল ছাত্রসংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।
শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, গতকালকে (সোমবার) একটি মীমাংসিত ইস্যুকে তিনি আবারও উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামনে এনেছে। একজন ছাত্র প্রতিনিধি হয়ে তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষ নিয়ে যে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন- এতে করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
এর আগে রোববার বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে মন্তব্যের জেরে সমালোচনার মুখে পড়েন উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা ছিল একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এই দেশকে অন্য একটি দেশের করদরাজ্যে পরিণত করার লক্ষ্যেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে।
অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিন নির্ধারিত ছিল। তারা (পাকিস্তান সেনাবাহিনী) ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা জীবিত না মৃত অবস্থায় ফিরবে- সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে- এই ধারণা রীতিমতো অবান্তর।
প্রশাসনিক ভবনে তালা, ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ দুই উপ-উপাচার্য
এদিকে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে এবং উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ভবনের ভেতরে দুই উপ-উপাচার্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তালা খোলা হবে না বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
সোমবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ভবনটির সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছয়টি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এরপর রাত ৮টার দিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের দুই পাশে অবস্থান নেন। পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এ সময় প্রশাসনিক ভবনের এক পাশে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে অবস্থান করছিলেন শাখা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, নারী অঙ্গন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। একই সঙ্গে চাকসুর প্রতিনিধিরাও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
পরে উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরা। বিজয় দিবসের বিষয়টি মাথায় রেখে পরবর্তীতে আন্দোলন বন্ধ রাখতে সম্মত হয় তারা। এর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপ-উপাচার্যের বক্তব্যের ব্যাখ্যা এবং সঠিক বক্তব্য শিরোনামে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।