জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, ‘হঠাৎ করেই এনসিপি নেতাদের কণ্ঠে আগুন ঝরছে এবং তাদের বক্তব্যে এত বেশি অস্থিরতা, সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম রিপোর্টও করছে। আমি তিনজন নেতার বক্তব্যের শিরোনাম তুলে ধরছি, তার মধ্যে দুইটা হচ্ছে হুমকি আর একটা হচ্ছে কটাক্ষ। এনসিপি নেতা আখতার বলেছেন, নতুন সংবিধান প্রণয়নে বাধা দিলে রাজপথে নামতে এক সেকেন্ডও লাগবে না। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, লন্ডনে গিয়ে সেজদা দিয়ে এসেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বিদেশে অনলাইনে পড়ে থাকতে হবে।’
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিও বার্তায় মোস্তফা ফিরোজ এসব কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “এখানে ক্ষমতায় আছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তাকে কটাক্ষ করছেন। আবার হুমকিও দিচ্ছেন— রাজপথে নামতে এক সেকেন্ডও সময় লাগবে না।
'সেজদা দিয়ে এসেছেন'— এটা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সম্মানজনক কোনো বক্তব্য হলো না। তারেক রহমান বিদেশে থেকে অনলাইনে জুম মিটিং করেন, বক্তব্য দেন, সংযুক্ত হন; সেটাকে বলেছেন— ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বিদেশে অনলাইনে পড়ে থাকতে হবে। এই অস্থিরতার কারণ কী আমি বুঝতে পারি না। এটা ঠিক হচ্ছে কি না? কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ডেটোরেট করবে।
যত পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য আসবে, সেগুলো আরো অবনতির দিকে যাবে।”
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে থেকে তিনি (তারেক রহমান) যে পর্যন্ত আগাইছেন অনেকে সরাসরি এখন মাঠে কোনো হালে পানি পাচ্ছেন না। তারেক রহমান তো অবশ্যই আসবেন। তখন কী হবে সেটাও মাথায় রাখা দরকার। পদযাত্রা তারাও করেছে, এই রকম দেশব্যাপী যখন তারেক রহমান ছুটবেন, একটা ট্যুর দেবেন, কল্পনা করেন সেদিন কী হবে।
এনসিপির নেতারা করেছেন আর তারেক রহমান করবেন, পরিস্থিতিটা একটু কল্পনা করেন।’
ফিরোজ আরো বলেন, ‘এইভাবে সবাইকে কটাক্ষ করে সবাইকে শত্রু করে এই বক্তব্যগুলো পাবলিকলি খাবে না। তরুণরা জাতীয় ঐক্য তৈরি করবে, সব রাজনৈতিক দল মিলে তাদের পরিচালিত করবে— এ রকম একটা অবস্থানে থাকা দরকার ছিল। তারা বিভিন্ন দলের প্রতিপক্ষ হবে বা তাদের উদ্দেশ করে অনেকে কথা বলবে, এটা কাঙ্ক্ষিত ছিল না। এটা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু সেটা হচ্ছে।’
মানুষ কি সত্যিই পরিবর্তন অনুভব করছে : জিল্লুর রহমান
মানুষ কি সত্যিই পরিবর্তন অনুভব করছে বলে প্রশ্ন করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, এ পথ কতদূর আগালো? মানুষ কি সত্যিই সেই পরিবর্তন অনুভব করছে নাকি কেবল কাগজে কলমে কিছু পরিকল্পনা— বাস্তবে যার অগ্রগতি অতি সামান্য। বাস্তবতা হলো দেশের অর্থনীতি এখনো অস্থির। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি থামানো যায়নি।
কর্মসংস্থানের সংকট কমেনি। দীর্ঘদিনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাঁটা হয়ে রয়ে গেছে।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, এক বছর আগে বাংলাদেশ কেঁপে উঠেছিল এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে।
শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে সঙ্গেই বাতাসে ভেসে উঠেছিল নতুন আশার গন্ধ। তরুণ প্রজন্ম চেয়েছিল দুর্নীতিমুক্ত গণতন্ত্র, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র যেখানে আর কোনো একক নেতা বা পরিবার চিরকাল ক্ষমতায় বসে থাকবে না। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হলো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি ছিলেন স্বীকৃত।
দেশে তার ভাবমূর্তি ছিল গ্রহণযোগ্য। তার ওপর ভরসা করেই ছাত্ররা-সাধারণ মানুষ ভেবেছিল বাংলাদেশ এবার নতুন পথে হাটবে।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা রোধে ব্যর্থতার অভিযোগ জোড়ালো। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে সরকার এখনো প্রতিশোধ পরায়ণ মানসিকতা ছেড়ে ফেলতে পারেনি। ড. ইউনূসের উদ্যোগে ১১ টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে।
বিচার বিভাগ, সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন সবকিছুর জন্য আলাদা প্রস্তাবনা প্রস্তুত হয়েছে। কিন্তু সেসব কবে বাস্তবে রূপ নেবে তা এখনো অনিশ্চিত।
জিল্লুর রহমান আরো বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো আশাবাদী। তারা মনে করে শেখ হাসিনার দীর্ঘ দুঃশাসন থেকে মুক্তি মিলেছে। এখন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তবে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। একই সঙ্গে মানুষ ক্লান্ত। তারা বাস্তব ফলাফল দেখতে চায়।