গতবারের চেয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায়

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৫:২৮

২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এনবিআরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের জুনে আদায়কৃত ৫৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকার চেয়ে ৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা কম।
সাধারণত অর্থবছরের শেষ মাসে রাজস্ব আদায় সর্বোচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু চলতি বছর এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেড় মাসের আন্দোলনের প্রভাবে রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে আমদানি-রফতানি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে রাজস্ব সংগ্রহে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে বাস্তবে আদায় হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বা প্রায় ২০ শতাংশ।
তবে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা, অথচ আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০ কোটি টাকা— ঘাটতি প্রায় ৪২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা।
স্থানীয় পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল একই পরিমাণ, কিন্তু আদায় হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা কম।
কাস্টমস বা শুল্ক খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, কিন্তু আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৯৮ কোটি টাকা—ঘাটতি ২০ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
তবে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির দিক থেকে সামান্য ইতিবাচক চিত্র দেখা গেছে। শুল্কে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ, ভ্যাটে ৩ দশমিক ০১ শতাংশ এবং আয়করে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এনবিআরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাধারণত জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। কিন্তু আন্দোলনের কারণে তা সম্ভব হয়নি। প্রায় দেড় মাসের অচলাবস্থায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের ভাটা পড়ে।’
তিনি আরও জানান, চলতি বছরের ১২ মে এনবিআরকে ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—দুই পৃথক বিভাগে বিভক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাগাতার কর্মবিরতিতে যান, যা ২৯ মে পর্যন্ত চলেছে। ফলে জুন মাসের রাজস্ব আহরণ স্বাভাবিক গতিতে হয়নি।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, চূড়ান্ত হিসাব সম্পন্ন হলে কিছুটা আয় বাড়তে পারে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন