সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে ভারতে থেকে চাল আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) করতে উদ্যোগ নিতে দুই দফা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
এমওইউ স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিতে গত জানুয়ারিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথম চিঠি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। কোনো অগ্রগতি না পেয়ে গত ১৮ মে আরেকটি চিঠি দেয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখতে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের পাশাপাশি জিটুজি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে চাল আমদানির জন্য থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এমওইউ রয়েছে। জিটুজি পদ্ধতিতে ভারত থেকে সুলভ মূল্যে নন বাসমতী সেদ্ধ চাল আমদানি করতে এমওইউ স্বাক্ষর করা যায়।
খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান দেশের বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের চলতি দায়িত্বে) প্রদীপ কুমার দাস বিষয়টিকে ‘স্পর্শকাতর’ উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমওইউ এখনও স্বাক্ষর হয়নি।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানির প্রক্রিয়া জটিল। অনেক ক্ষেত্রে চাল পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। ভারত অন্যতম চাল রপ্তানিকারক দেশ। সেখান থেকে আনার পরিবহন খরচও কম। তাই ভারতের সঙ্গে এমওইউ করতে আগ্রহী সরকার। এমওইউ থাকলে জিটুজি পদ্ধতিতে চাল পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। কারণ, এ ক্ষেত্রে এক ধরনের দায়বদ্ধতা থাকে। আবার দাম বেশি মনে হলে জিটুজি পদ্ধতিতে না নিয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্রের বিকল্প থাকে।
আমদানিতে বার্ষিক কোটা পায়নি বাংলাদেশ
২০২২ সালের ডিসেম্বরে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন ও আদা– ছয়টি নিত্যপণ্য ভারত থেকে আমদানিতে বার্ষিক কোটা চায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই সময় এসব খাদ্যপণ্য আমদানিতে আলাদা কোটা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল ভারত। শেষ পর্যন্ত কয়েক দফা চিঠি চালাচালি আর আলোচনা হলেও বেশি দূর এগোয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত চাল, পেঁয়াজ ও গম রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ। নিত্যপণ্য আমদানিতে ভারতের সঙ্গে বার্ষিক কোটা থাকলে সামগ্রিকভাবে কোনো পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করলে বাংলাদেশ তার আওতায় থাকবে না। ভুটান ও মালদ্বীপকে এ সুবিধা দিয়ে আসছে ভারত।
বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকের অগ্রগতি নেই
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। দেশ ছেড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতেই অবস্থান করছেন। এর পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়েছে। গত ৯ এপ্রিল পেট্রাপোল ও গেদে স্থলবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে উড়োজাহাজে রপ্তানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। গত ১৫ এপ্রিল ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধ করে বাংলাদেশ। এর পর গত ১৭ মে দেশটি বেশ কিছু বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।