স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি ইশরাক হোসেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে তার শপথ নিয়ে ‘অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক’ তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।
পাশাপাশি এই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে ইশরাক বলেন, ‘জনগণের শ্রদ্ধাশীল আচরণ, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন তার কাছ থেকে কাম্য। অসত্য তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা তার কাজ নয়। কারণ এত অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে সেসব জনগণ তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। তাদের তিনি বিভ্রান্ত করতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য গণমাধ্যমে উপস্থাপন করায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন আসিফ। তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গ করার জন্য আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।’
এর আগে সোমবার (১৬ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইস্যুতে স্থানীয় সরকার বিভাগ কোনো আইন ভঙ্গ করেনি। বিষয়টি বিচারাধীন থাকাবস্থায় গেজেটের মেয়াদ এবং পরবর্তীতে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগের শপথ দেওয়ার কোনো আইনি সুযোগ নেই।’
সজীব ভূঁইয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে ইশরাক অভিযোগ করে বলেন, ‘নানা ধরনের প্রশ্ন তুলে মেয়র পদে তার শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের পথ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। উপদেষ্টার কথা সত্যি হলে ভবিষ্যতে অনেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি শপথ নিতে পারবেন না।’
ইশরাক বলেন, ‘অর্থাৎ বিজয়ী প্রার্থীর নামে গেজেট প্রকাশ হলে পরাজিত প্রার্থী অথবা যে কোনো একজন নাগরিককে সজীব ভূঁইয়ার মত ব্যক্তি ইন্ধন দিয়ে শপথ না পড়ানোর জন্য হাইকোর্টে রিট করাবেন। আর ওই রিটটি অনিষ্পন্ন থাকলে গেজেটে উল্লিখিত ৩০ দিন মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে কোনো জনপ্রতিনিধি শপথ পড়ার সুযোগ পাবেন না।’
কারো নাম না নিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ‘তার পছন্দের একজনকে প্রশাসক নিয়োগ করে’ রাজনৈতিক ও অন্যায়ভাবে ‘আর্থিক ফায়দা লোটার’ চেষ্টা করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে আহ্বান জানাতে চাই আপনারা এখানে আসুন। যতদিন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অফিস করেছে, কী কী দুর্নীতি করে গেছেন তা আপনারা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার বিনিময়ে উপদেষ্টার পদ পেয়েছেন। এত কম সময়ে কীভাবে তারা এই পরিমাণ দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেল?’
ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের শপথ পড়ানোর দাবিতে তার সমর্থক ও ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নের আন্দোলন দ্বিতীয় মাসে গড়িয়েছে। এ আন্দোলনের কারণে গত এক মাস ধরে নগর ভবন কার্যত বন্ধ রয়েছে।
গেল মাসের আন্দোলন নিয়ে ইশরাক বলেছেন, ‘তাদের আন্দোলন সচিবালয় ছাড়িয়ে যমুনা পর্যন্ত গিয়েছিল। পরে সরকারের কাছ থেকে বিষয়টি সুরাহা হবে এমন একটি বার্তা তিনি পেয়েছিলেন।’
এছাড়া জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করেও সেখান থেকে সরে এসেছিলেন জানিয়ে ইশরাক সতর্ক করেছেন, সংকটের সুরাহা না হলে ফের আন্দোলন রাজপথে গড়াবে।
সরকারকে দায়ী করে ইশরাক বলেন, ‘আজকের অবস্থার জন্য দায়ী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং এর উপদেষ্টারা। প্রধান উপদেষ্টার এটিকে এড়িয়ে যেতে পারেন না। আমি উনার উদ্দেশ্যে বলতে চাই বিষয়টি আপনার নজরে আনুন। যৌক্তিক সমাধান করে ঢাকাবাসীকে মুক্তি দিন।’
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়। মাঝে ঈদ ঘিরে ছুটির কদিন নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটির শেষে অফিস খোলার প্রথম দিন রবিবার ফের সেখানে আন্দোলন শুরু করেন ইশরাক সমর্থকরা।
সে সময় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা কাটাতে নিজের তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন ইশরাক। জন্ম নিবন্ধন সনদসহ দৈনন্দিন জরুরি সব সেবা চালু থাকার ঘোষণা দিয়ে ইশরাক বলেছিলেন, ‘অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কর্মকর্তারা অফিস করতে পারবে না।’
এর মধ্যে মেয়র হিসেবে শপথ নিতে না পারলেও নগর ভবনে কর্মচারীদের নিয়ে সভা করেছেন ইশরাক। নগর ভবনের মিলনায়তনে সোমবার (১৬ জুন) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ওই মতবিনিময় সভায় ইশরাক ছিলেন প্রধান অতিথি। সভার ব্যানারে তার নামের আগে লেখা ছিল ‘মাননীয় মেয়র’।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।