যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি

১০০ আমদানি পণ্যের শুল্ক কমাতে যাচ্ছে সরকার

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২০ মে ২০২৫, ১৩:৩০


যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বাড়তি শুল্ক কমানোর জন্য প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে আসন্ন বাজেটেই অন্তত ১০০ ধরনের আমদানি পণ্যের শুল্ক কমাতে যাচ্ছে সরকার। সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেন। 
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান ছাড়াও আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক অনুবিভাগের নীতি শাখার সদস্য, প্রথম সচিব ও দ্বিতীয় সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন কর ৫ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশে উন্নীত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। 
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের পক্ষ থেকে ১০০টি ট্যারিফ লাইনের পণ্যে শুল্ক শূন্য করার প্রস্তাব করা হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির বিষয়টি মাথায় রেখে। তখন প্রধান উপদেষ্টা জিজ্ঞেস করেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বেলায় কীভাবে সম্ভব। এনবিআর বলেছে, এসব পণ্যে শুল্ক ছাড় দিলে তার বেশি সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রই পাবে। 
এক বা একাধিক সমজাতীয় পণ্যের নির্দিষ্ট শুল্ক হার ঠিক করা হয় ‘ট্যারিফ লাইন’ বা এইচএস কোড দিয়ে। তার মাধ্যমেই আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন হয়। তেল, গ্যাস, অস্ত্র, ফাইটার বিমানের পার্টস, মিসাইল এমন ১৫-১৬টি পণ্যও এর মধ্যে রয়েছে, যা কেবল সরকার কেনে। আর সরকারি কেনাকাটার মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব বলে মনে করে এনবিআর। অস্ত্র ও যুদ্ধ বিমান, মিসাইল জাতীয় পণ্য সরকার কিনলে তখন চুক্তির আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকে। ফলে রাজস্ব হারানোর শঙ্কা থাকে না।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এদেশে আসে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আমদানি রপ্তানির ব্যবধান ঘোচাতে গত এপ্রিলে বিশ্বের শতাধিক দেশের ওপর বড় অংকের শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন।
বাংলাদেশের পণ্যের ওপর আগে থেকেই ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। আরও ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে সব মিলিয়ে ৫২ শতাংশ শুল্কের হুমকিতে পড়ে বাংলাদেশের পণ্য। বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। নতুন করে সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে ডনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি পাঠান প্রধান উপদেষ্টা।
বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হয় সেখানে। বাংলাদেশের মত অনেক দেশই শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেন দরবার শুরু করে। কোনো কোনো দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক হার শুন্যের ঘরে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশ আগে থেকেই ১৯০ ধরনের পণ্যের শুল্কহার শূন্য রেখেছে। এবার আরও ১০০ ধরনের পণ্য সেই তালিকায় যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, খুব বেশি রাজস্ব আসবে না, অথচ সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়বে, সেসব জায়গায় কর না বসাতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সেজন্য বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রসঙ্গ এসেছে এবং করপোরেট কর হার অপরিবর্তিত রাখার কথা বলা হলেও শর্ত পালনে কিছু শিথিলতার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা মৎস্য, ডেইরি ও পোলট্রি খাতে বিনিয়োগ দেখিয়ে কর ছাড়ের সুবিধা নিয়েছেন। ওই সুযোগ তুলে দেওয়া হবে।