জাতীয় সংগীত ও পতাকা নিয়ে কথা বলায় সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এখন তো আওয়ামী দোসররা নেই, তাহলে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অরাজক পরিস্থিতি? ক্যাম্পাসে কেন তরুণ ছাত্রের লাশ পড়ছে, রক্ত ঝরছে?।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত পরশু রাত ১২টার দিকে ছাত্রদল নেতা সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। কি অন্যায় করেছিলেন সাম্য! আমার তো মনে হয় এখানে রাজনৈতিক কারণ আছে। তিনজন ভবঘুরে সাম্যকে কেন হত্যা করবে? কয়েকদিন আগে জাতীয় সংগীত বন্ধের জন্য শাহবাগে একটা আন্দোলন চলছিল। তার বিরুদ্ধে এবং জাতীয় সংগীতের পক্ষে একটা পোস্ট করেছেন। এটাই কি সেই কারণ? প্রশ্ন রিজভীর।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। আজ জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, ৭১ এবং স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে তার জীবন চলে যায়। আমি এজন্যই বলেছি, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা বলেন, আপনারা ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন। ভবঘুরেদের গ্রেফতার করেছেন, মানুষ এসব বিষয় সহজভাবে নেয় না। মানুষ সহজভাবে নিত যদি, সবসময় সত্য এবং ন্যায় অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু সেটা তারা নেয়নি। যেমন আবরার হত্যাকাণ্ডে নেয়নি, তেমনি আরও ঘটনাও নেয়নি। আজ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা নেই, দোসররা নেই, রক্তপাত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে তফাজ্জল নামে একজনকেও হত্যা করা হয়েছে। ক্যাম্পাস হবে শান্তি, এখানে থাকবে শান্তির পতাকা। সেখানে কেন রক্তপাত হবে। এটা তো হওয়ার কথা নয়।
তিনি বলেন, গতকাল ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে গিয়েছেন ছাত্র দলের নেতারা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মারা গেছে। তাতে আপনি বিরক্ত হয়েছেন, ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুইতোকারি করেছেন ছাত্র নেতাদের। আপনি শুনতে চান না। কারণ, সাম্য ছাত্রদল করে। আপনার রাজনৈতিক চিন্তা দর্শন কি সেটা আমরা এরই মধ্যে জেনেছি। যারা জাতীয়তাবাদের পক্ষে ওখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ছাত্র সংগঠন করে সেটা আপনি পছন্দ করেন না। আপনার উচিত ছিল প্রথমে সেই লাশ দেখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। ভাইস চ্যান্সেলররা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিশেষ দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই শান্তি বয়ে আনবে না।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেটা আমরা জানি না। আপনাদের আমরা সমর্থন করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। কিন্তু এনসিপি যখন যমুনার দিকে যায়, তখন তাদের সাদরে বরণ করেন। দেখলাম আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে তারা গেলেন, তাদের সাদরে বরণ করলেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা তাদের আবাসনের জন্য গেলো, তখন আপনারা তাদের উপহার দিলেন লাঠিচার্জ। আপনাদের আচরণের মধ্যে এই দ্বিচারিতা কেন? আপনাদের আচরণের মধ্যে এই বিভাজন কেন?
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, ছাত্রদল নেতা আওয়ালসহ উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতারা।